অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশে শব্দ দূষণের জন্য ২০ শতাংশ মানুষ হতাশা ও উদ্বেগে ভুগছে। মানুষের চেয়ে বন্যপ্রাণীর ক্ষতি বেশি হচ্ছে; শব্দ, বায়ু দূষণের ফলে ঢাকায় কমে গেছে পাখির সংখ্যা। গাড়িতে শব্দ দূষণ মনিটরিংয়ের জন্য তাই ট্রাকিং ডিভাইস স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাসসহ সকল গাড়িতে শব্দের মাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের সাথে দূষণ মনিটরিংয়ের জন্য ডিভাইস স্থাপন করে দিয়ে সেটি ট্রাফিক বিভাগ পর্যবেক্ষণ করলে শব্দ দূষণ নামক নীরব ঘাতক থেকে আমরা অনেকটাই মুক্তি মিলতে পারে। পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য আমাদের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম কার্বন নির্গমন করলেও শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে আমাদের অবদান কম নয়।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ঢাকাসহ প্রতিটি জেলায় শব্দ দূষণের উৎস এবং শব্দের যে তীব্রতা তা একই ধরনের। পার্থক্য শুধুমাত্র শব্দের স্থিতি সময়। ঢাকা শহরের শব্দ দূষণের স্থিতিকাল ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে কিন্তু জেলা শহরগুলোতে এটি সাধারণত ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা হয়ে থাকে।
কান নাক গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যপক ফয়েজ উদ্দিন বলেন, উচ্চ শব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। উচ্চ শব্দের কারণে বিশেষত শিশুদের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আকস্মিক উচ্চ শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয় এবং মাংসপেশীর সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শব্দের মানমাত্রা বজায় রাখতে আবাসিক এলাকা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা সরিয়ে ফেলতে হবে, অর্থাৎ ভূমির ব্যবহার যেন ঠিক থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বিআরটিএ থেকে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার সময় মালিক ও ড্রাইভারদের নিয়ে হর্নের ভয়াবহতা নিয়ে সেমিনার করার মাধ্যমে সচেতন করতে হবে। অতিরিক্ত শব্দ দূষণের ফলে আমরা ধীরে ধীরে বধির জাতিতে পরিণত হচ্ছি আমরা।
আফ্রিকার জঙ্গলে বন্য হাতি, বন্য পশু তাড়ানোর জন্য হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হতো। কিন্তু বাংলাদেশে এর কতটুকু প্রয়োজনীয়তা আছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞরা। বলেন, সড়ক নিরাপত্তা আইনের ৮৪ ধারা হাইড্রোলিক হর্ণ এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান রয়েছে সেখানে আমরা সর্বোচ্চ ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু কার্যত সেগুলো কোন কাজে আসছে। ফলে শব্দ দূষণের হাত থেকে নগরবাসীকে বাঁচানো যাচ্ছে না।
Leave a Reply